Admission
পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ২য় পত্র - তাড়িতচৌম্বকীয় বর্ণালি বা স্পেক্ট্রাম

 তাড়িতচৌম্বকীয় বিকিরণে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে দৃশ্যমান আলো, অবলোহিত বিকিরণ, বেতার তরঙ্গ, অতিবেগুনি বিকিরণ, এক্সরে ও গামারশ্মি। এসব বিকিরণ যে বর্ণালির সৃষ্টি করে তাকে তাড়িতচৌম্বকীয় বর্ণালি বলা হয় ।

দৃশ্যমান আলো : 

  এর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের পাল্লা 7.80 x 10-7m থেকে 3.80 x 10-7m। এটি বিকিরণের একটি ক্ষুদ্র পটি বা ব্যান্ড (band) যার মধ্যে রয়েছে লাল থেকে বেগুনি আলো। দৃশ্যমান আলো কোনো অগ্নিশিখা বা ভাস্বর বস্তু থেকে উৎপন্ন হয় এবং মানব চক্ষু, ফটোগ্রাফিক ফিল্ম ও ফটোইলেকট্রিক সেল দ্বারা উদ্ঘাটিত হয়।

অবলোহিত বিকিরণ: 

  এই বিকিরণ 10-6m থেকে 10-8m তরঙ্গদৈর্ঘ্যের পাল্লায় একটি বিকিরণ ব্যান্ড। এ ধরনের বিকিরণ উত্তপ্ত বস্তু যেমন সূর্য, তড়িৎশিখা ও তড়িৎচুল্লি থেকে উৎপন্ন হয়। এ বিকিরণকে থার্মোপাইন (thermopine), ফটোট্রানজিস্টর ইত্যাদি দ্বারা উদ্ঘাটন করা যায়। এই বিকিরণ প্রতিফলন ও প্রতিসরণের সূত্র মেনে চলে। এর ব্যতিচার ও সমবর্তন (polarization) ঘটে। কোনো বস্তুতে পতিত হলে বস্তুর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এর বেগ আলোর বেগের সমান। এ বিকিরণ সৌরচুল্লি ও সৌর হিটারে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে, কুয়াশার মধ্যে ছবি তুলতে, ফলকে শুষ্ক করতে, মাংসপেশির ব্যথা বা টান এর চিকিৎসায় এ রশ্মি ব্যবহৃত হয়।

বেতার তরঙ্গ : 

তাড়িতচৌম্বকীয় বিকিরণের মধ্যে যাদের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের পাল্লা 10 -2m থেকে 5 x 104 m তাদের বলা হয় বেতার তরঙ্গ। বেতার তরঙ্গকে আবার কয়েকটি উপবিভাগে ভাগ করা যায়। এরা হলো মাইক্রোওয়েভ বা মাইক্রোতরঙ্গ; রাডার তরঙ্গ ও টেলিভিশন তরঙ্গ। 

বেতার তরঙ্গ উৎপাদিত হয় তড়িৎ স্পন্দনের মাধ্যমে। সাধারণ কোনো অ্যারিয়েল বা অ্যানটেনা দ্বারা ইলেকট্রনকে স্পন্দিত করে বেতার তরঙ্গ উৎপাদন করা হয়। দূরবর্তী স্থানে শব্দ বা ছবি প্রেরণের জন্য এ বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়।

অ্যানটেনা দ্বারা বিকীর্ণ যে তড়িৎশক্তি শূন্যস্থানে তাড়িতচৌম্বকীয় তরঙ্গ হিসেবে থাকে তাকে বলা হয় বেতার তরঙ্গ।

এ তরঙ্গের শক্তি তড়িৎ ও চৌম্বক এ দুই ক্ষেত্রের মধ্যে সমানভাবে বণ্টিত থাকে। মধ্যম ও দীর্ঘ তরঙ্গের পথে বাধা থাকলেও অপবর্তনের মাধ্যমে তাদের পথের বাধা (পাহাড়-পর্বত) পেরিয়ে যেতে পারে। ফলে ট্রানজিস্টর ও রেডিও সিগন্যাল প্রেরক অ্যানটেনা থেকে গ্রাহক যন্ত্রে পৌঁছায়। এছাড়া পৃথিবীর ঊর্ধ্ব বায়ুমণ্ডলের আধানযুক্ত কণিকার স্তর দ্বারা মধ্যম ও দীর্ঘ বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়। ভূ-পৃষ্ঠের বাঁক থাকা সত্ত্বেও দূরবর্তী স্থানে এ ধরনের তরঙ্গ সঞ্চালিত হতে পারে। টেলিভিশন (VHF ও UHF) তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ক্ষুদ্রতর। এরা ঊর্ধ্ব বায়ুমণ্ডলের স্তর থেকে প্রতিফলিত হয় না। এবং কোনো উঁচু বাধা (যেমন পাহাড়-পর্বত) দ্বারা খুব সামান্যই পরিবর্তিত হয়। গ্রাহকযন্ত্রে উত্তম সিগন্যাল পেতে হলে এই ধরনের তরঙ্গের জন্য প্রেরক অ্যানটেনা থেকে গ্রাহক (টিভি) অ্যারিয়েল পর্যন্ত ভ্রমণ-পথ সরলরেখা হওয়া উচিত

চিত্র :৭.২ বিভিন্ন ধরনের তাড়িতচৌম্বকীয় বিকিরণ

এ জন্য দূরবর্তী স্থানে টেলিভিশন তরঙ্গ কৃত্রিম উপগ্রহ বা (স্যাটেলাইট)-এর মাধ্যমে রিলে (relay) করা হয় ।

অতি বেগুনি বিকিরণ : 

   নাম থেকেই বোঝা যায় যে, তাড়িতচৌম্বকীয় বর্ণালির দৃশ্যমান আলোর বেগুনি প্রান্ত ছাড়িয়ে এ বিকিরণের অবস্থান। এর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের পাল্লা 5 x 10-7m থেকে 5 x 10-9m। কার্বন-আর্ক-ল্যাম্প, উত্তরে বস্তু ও সূর্য থেকে এই বিকিরণের উৎপত্তি হয়। এই বিকিরণকে ফটোগ্রাফিক প্লেট ও প্রতিপ্রভা দ্বারা উদ্ঘাটন করা যায়। এই বিকিরণ প্রতিফলন ও প্রতিসরণের সূত্র মেনে চলে। এর ব্যতিচার ও সমবর্তন ঘটে। কোনো বস্তুতে পতিত হলে তা থেকে ফটোইলেক্ট্রন নির্গত হয়। কোনো পদার্থে প্রতিপ্রভার সৃষ্টি করে ।

  চুরি নিরোধক অ্যালার্ম, স্বয়ংক্রিয়ভাবে দরজা খোলার যন্ত্র ও কাউন্টারে এ বিকিরণ ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া আসল হীরা ও নকল ব্যাংক নোট উদ্ঘাটনে অতি বেগুনি বিকিরণ ব্যবহৃত হয়। শল্য চিকিৎসায় যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করতে এ বিকিরণ ব্যবহৃত হয় ।

এক্স-রে (X-ray) : 

  এক্স-রে তরঙ্গদৈর্ঘ্যের পাল্লা 5x10-8 m থেকে 5 x 10-15 m-এর মধ্যে। সুতরাং এর এক প্রাপ্ত অতি বেগুনি বিকিরণ ও অপর প্রাপ্ত গামা রশ্মির পাল্লার ওপর উপরিলেপিত হয়। অত্যন্ত দ্রুতগতিসম্পন্ন ইলেকট্রনকে কোনো ভারী ধাতব বস্তু দ্বারা থামিয়ে দিলে এক্স-রে উৎপন্ন হয়। একে ফটোগ্রাফিক প্লেট বা ফিল্ম দ্বারা উদ্ঘাটন করা যায় । এছাড়া ধাতুতে তাড়িতচৌম্বকীয় প্রভাব তৈরি করে এবং গ্যাসে আয়নায়ন সৃষ্টি করে এক্স-রে উদ্‌ঘাটন করা যায়। ভাঙা হাড় ও দেহের অভ্যন্তরস্থ কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ছবি তুলতে এক্স-রে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া দেহের ক্ষতিকারক সেল টিউমার ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়। কোনো ধাতব যন্ত্রের কোথাও কোনো ফাটল আছে কিনা তা শনাক্ত করতেও এক্স-রে ব্যবহৃত হয়।

গামা-রে (Gamma rays) : 

  এর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের পাল্লা 5 x 10-11 m থেকে 5 x 10-15 m বা এর চেয়েও কম। তরঙ্গদৈর্ঘ্যের দিক দিয়ে এটি এক্স-রের অঞ্চলে উপরিলেপিত হয়। তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াস থেকে এ রশ্মি নির্গত হয়। ফটোগ্রাফিক প্লেট ও গাইগার মূলার কাউন্টার দিয়ে এ রশ্মি উদ্ঘাটন করা যায়। মানবদেহে ক্যান্সার আক্রান্ত কোষকে ধ্বংস করতে এই রশ্মি ব্যবহৃত হয়।

দৃশ্যমান আলোর বর্ণালি

  সূর্যের সাদা আলোর বর্ণালিতে রয়েছে বেগুনি, নীল, আসমানী, সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল রঙের সাতটি আলো। রংগুলোর নাম ও ক্রম সহজে মনে রাখার জন্য এদের নামের আদ্যাক্ষরগুলো নিয়ে ইংরেজিতে VIBGYOR ও বাংলা বেনীআসহকলা শব্দ গঠন করা হয়। এই রংগুলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের পাল্লা নিচে দেয়া হলো :

বেগুনি : 3.80 x 10-7m থেকে 4.25 x 10-7m

নীল    : 4.25 x 10-7m থেকে 4.45 x 10-7m

আসমানী : 5.00 x 10-7m থেকে 5.75 x 10-7m

সবুজ : 5.75 x 10-7m থেকে 5.85 x 10-7m

হলুদ : 5.85 x 10-7m থেকে 6.20 x 10-7m

কমলা : 6.20 x 10-7m থেকে 7.80 x 10-7m

লাল :  4.45 x 10-7m থেকে 5.00 x 10-7m

Content added || updated By